কাগজে-কলমে বিয়ানীবাজারে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৫৫ শতাংশ। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এমন দুরবস্থা’র মধ্যেই সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। বিয়ানীবাজারে সাক্ষরতার হার বাড়াতে বছরজুড়ে কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ফলে উপজেলায় থমকে গেছে সাধারণ সাক্ষরতা বৃদ্ধির গতি। এদিকে উইকিপিডিয়ার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিয়ানীবাজার পৌরসভা এলাকায় শিক্ষার হার ৫৯.০৩ ভাগ।
এদিকে বর্তমানে সরকার কর্তৃক বদলে গেছে সাক্ষরতার সংজ্ঞা। নতুন সংজ্ঞায় একজন মানুষ কেবল সই করতে পারলেই সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন বলে বিবেচিত হবে না। সাক্ষরতা অর্জনের জন্য এখন দরকার যোগ-বিয়োগসহ সাধারণ ও প্রযুক্তিগত কিছু জ্ঞান।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্র জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে সাক্ষরতার হার তরতর করে বাড়তে থাকে। প্রতিবছর দিবসটি ঘিরে যে পরিসংখ্যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হতো, তা ‘সঠিক ছিল না’ বলে জানা গেছে। তাছাড়া বিয়ানীবাজারে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম নেই। যারা প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারছে না, তাদের জন্য বয়স্ক সাক্ষরতা কার্যক্রম ও শিশুদের জন্য দ্বিতীয় ধাপের শিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প কখনো এ উপজেলায় ছিলনা। ফলে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম ও শিশুদের জন্য এ ধরনের সুযোগ কম থাকায় এখনো অনেক মানুষ নিরক্ষর রয়ে গেছে। বিগত সরকারের সময়ে বিয়ানীবাজার উপজেলায় কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে তা মুখ থুবড়ে পড়ে।
জানা যায়, সাক্ষরতা অর্জন করা হয় দুই পদ্ধতিতে। একটি হচ্ছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, যারা প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যারা পড়ালেখা করে তারা সাক্ষরতা জ্ঞান অর্জন করে। সর্বশেষ আদমশুমারি বা সরকারি প্রতিবেদন থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলার সাক্ষরতার হার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট ও হালনাগাদ তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দুই বছর আগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান নিদনপুর গ্রামের আবদুল আলিম। পড়ালেখার জন্য নয়, এ তরুণের যাত্রা কাজের সন্ধানে। আবদুল আলীম উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোলেও অনেকে তাও পারছে না। মাধ্যমিকের পরই থেমে যাচ্ছে তাদের শিক্ষাযাত্রা। ফলে উচ্চশিক্ষা অর্জনেও ক্রমেই পিছিয়ে আছে বিয়ানীবাজার। সরকারের পরিসংখ্যানও বলছে, প্রাথমিক-পরবর্তী মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা— সর্বস্তরেই দেশের আর বিভাগের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে এ উপজেলা।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের তদন্তকারী প্রণয় বাউল জানান, সরকার থেকে বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হলেও সেটি আর নিয়মিতকরণ হয় না। ফলে বয়স্ক মানুষ সাক্ষরতা জ্ঞান অর্জন করলেও সময়ের সঙ্গে kf ভুলে যায়।
বিয়ানীবাজারের মানুষের উচ্চ শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার একাধিক কারণ থাকলেও বিদেশমুখী প্রবণতাকেই এক্ষেত্রে বড় করে দেখছেন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখনো এখানকার বেশির ভাগ তরুণের স্বপ্ন কোনো রকমে বিদেশে যাওয়া, বিশেষত ইংল্যান্ডে। ফলে লেখাপাড়া শেষ না করেই তারা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম মুস্তাফা মুন্না বলেন, স্থানীয়ভাবে শিক্ষার হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সাক্ষরতার হারও। উপজেলার সাক্ষরতার হার বর্তমানে তা দুই-তৃতীয়াংশে ওঠে এসেছে।